Website Logo

Sunday, July 27, 2025 06:12 AM

উত্তরায় বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত: পাইলট নিহত, নিহতের সংখ্যা ২০, আহত ১৭১

উত্তরায় বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত: পাইলট নিহত, নিহতের সংখ্যা ২০, আহত ১৭১
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০ জনে দাঁড়িয়েছে, এবং আহত হয়েছেন ১৭১ জন, যাদের অধিকাংশই শিশু শিক্ষার্থী। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়।

পাইলটের সংখ্যা ও অবস্থা

বিমানটিতে একজন পাইলট ছিলেন, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর। আইএসপিআরের বিবৃতি অনুযায়ী, তিনি বিমানটিকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন, যাতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়। তবে, দুর্ভাগ্যবশত তিনি এই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। সামাজিক মাধ্যমে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়েছে, এবং অনেকে তার এই সাহসিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন।

ঘটনার বিবরণ
আইএসপিআর জানিয়েছে, বিমানটি সোমবার দুপুর ১:০৬ মিনিটে উড্ডয়ন করে এবং কিছুক্ষণ পরই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্যানটিনের ছাদে বিধ্বস্ত হয়। বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিমানে আগুন ধরে যায়, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং কাছাকাছি অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তদন্ত ও কারণ
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।

প্রধান উপদেষ্টার শোকবার্তা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই দুর্ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি এক শোকবার্তায় বলেন, “দুর্ঘটনায় বিমানসেনা ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীসহ অন্যান্যদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। জাতির জন্য এটি একটি গভীর বেদনার ক্ষণ।” তিনি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেন।

প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব
এই ঘটনায় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় প্রশাসন এবং বিমান বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে, এবং অনেকে পাইলট তৌকিরের সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন।

এই দুর্ঘটনা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুরোনো বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ এবং আধুনিকীকরণে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ২০১০ সাল থেকে ১৬টি এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান সংযোজন করেছে, যা চীনের চায়না ন্যাশনাল এয়ারো টেকনোলজি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন থেকে ক্রয় করা হয়েছিল।

 ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ইতিহাসে এটি সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাগুলোর একটি। এর আগে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৮০টি বিমান এবং পাঁচটি মিল মি-১৭ হেলিকপ্টার ধ্বংস হয়েছিল, তবে তা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঘটেছিল। বর্তমানে বিমান বাহিনী ফোর্সেস গোল ২০৩০ পরিকল্পনার আওতায় আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার মধ্যে আকাশ প্রতিরক্ষা এবং প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধি অন্তর্ভুক্ত।
জনসাধারণের মধ্যে এই ঘটনা নিয়ে গভীর শোক ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। সরকার এবং বিমান বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য সহায়তা এবং তদন্তের মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।